আকাশী কবিতার খাতা

সাঁঝবেলার গান
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী‌
********************
nbk1

পুরনো বিকেলে ফুরনো রোদের পসরা,
ফিরি করে ফেরে গোধূলির ফিরিওলা
দু তিনটি গাছ গুলতানি করে বসে
জোনাকি ঝিল্লি সঙ্গীতে সাঁঝনামা।

যে সব নৌকা আজও পারাপার শেখেনি
স্রোতে ভেসে যায় দিলদরিয়ার ঘাটে
তাদের সওয়ারী যত বিরহীর দল
কে জানে মিশেছে কোন মায়া মোহনাতে।

শাঁখ বেজে ওঠে দীপ জ্বলে তুলসীতে
পাখিরালয়ের ডোর ঢাকে উষ্ণতায়
কবোষ্ণ রাত স্বপ্ন মাখছে ঠোঁটে
চুপিসারে ঘুম এঁকে দিল পেন্সিলে।
(নবকল্লোল মাঘ ১৪২২ সংখ্যায় প্রকাশিত)

মুণ্ডু চুরি
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
mg 16

“দেখ দেকিনি কান্ড অলুক্ষুনে
চমকে যাবি বলব যা তা শুনে!
রাত দুপুরে ঘুম ভেঙ্গেছে যেই

মাথার পরে মুণ্ডু দেখি নেই!

হাতড়ে বেড়াই চেয়ার টেবিল দেরাজ

পাইনা খুঁজে বল দেখি ভাই কেয়া রাজ!

মুণ্ডু আমার অমন ধারা খাসা

চুলের ভিতর চামচিকেদের বাসা,

টিকির আগায় উল্টে বাদুড় ঝোলে

দাঁত কপাটি আপনা থেকেই খোলে,

চোখ দুখানি ভাঁটার মতন আহা

আচ্ছা আপদ হচ্ছে না সুরাহা।

ভূত সমাজে ছিঁচকে এমন চুরি

ধরলে ব্যাটার সাঙ্গ জারিজুরি,

কে নিয়েছিস সত্যি করে বল

মুণ্ডুটারও চক্ষে আসে জল”।
ব্রহ্মদানো দুঃখ করে বলে

শূন্য মাথায় হাত ঘুরিয়ে চলে,

এমন সময় স্কন্ধ কাটা আসে

স্কন্ধে তার এক মুণ্ডু দেখো হাসে!
“ওই তো আমার হারানো মুণ্ডুখান

আয় পাজি চোর করব কেটে দু’খান!’

রে রে করে ব্রহ্ম পিশাচ ধায়

স্কন্ধ কাটা ছিটকে সরে যায়,

মুণ্ডু সমেত খিলখিলিয়ে ওঠে

অবাক করা কাণ্ড খানা বটে!
বলল হেঁকে স্কন্ধকাটা ভূতে-
“আজ থেকে এই মুণ্ডু নিলাম জুতে,

ব্রহ্ম ভায়া এমনি করেই থাকো
মুণ্ডু বিনে কেমন লাগে দেখো,

চিরটা কাল একাই যাবে ভোগে

রইব আমি মুণ্ডু বিহীন রোগে?

মুণ্ডু গেছে তাই দিয়েছ জুড়ে

প্যানপ্যানানি কান্না নাকি সুরে,

চুপটি করে শান্ত হয়ে বোসো

প্রব্লেম হয় চাকর কিনে পোষো।

প্রথম প্রথম একটু অমন হবে

সবুর কর আপনি সয়ে যাবে।

খুলির জোরে নেতা বারংবার

কক্ষনো না এই অনাচার আর!

তাই বলি ভাই ব্রহ্ম দানো শোনো

চোটপাট আর দেখিও না কক্ষনো,

অনেক হল কান্নাকাটি থামো,
বেলগাছের ঐ আসন ছেড়ে নামো।
এখন থেকে আমিই ভূতের রাজা,
অমান্যতায় তুমিও পাবে সাজা!

[প্রকাশিতঃ ম্যাজিক ল্যাম্প শারদীয়া ১৪২৩]

নিরাকার
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী

ইচ্ছেঃ
আকাশের মুখ নিজের বুকে আগলে রেখে জল  —
‘কোনদিন কি বলবি না তুই, এক হয়ে যাই, চল?’

আশাঃ
শুকিয়ে এসেছে নদী-খালবিল, তেতলার কার্নিশে,
‘মাছ পাব ঠিক’, শহর ঘুমায় পানকৌড়ির শিসে।

প্রশ্নঃ
ডিমের পেটে মুরগি নাকি মুরগির পেটে ডিম
পক্ষে অথবা বিপক্ষে যাও, নইলে অতঃকিম?

দোটানাঃ
এইবারে ঠিক আগুন জ্বালিয়ে দেব,শরীরসুদ্ধ শেষ হবে লাঞ্ছনা
এমন সময়ে কঁকিয়ে উঠল ছেলে – কি ভাবলে মন,কথা কেন বলছনা!

পুনশ্চঃ
যে শব্দদের শরীর সাজায় আখর, আকারবিহীন নিবিড় অনুভবে
টুকরো এমন ভাবনা ইতস্ততঃ, আসছে বছর আবার না হয় হবে।

[প্রকাশিত ঃ কবিতা গল্প অল্প অল্প (পত্রভারতী, কলকাতা বইমেলা ২০১৬)]

টাইম পিস
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী

(১)
অনেকটা আইসক্রিমের মত প্রেম
গলে গলে যাচ্ছে অতীতের থেকে,
মুঠোভরা ফস্কানির মাঝে ধরা থাকবে
কাষ্ঠল ভবিষ্যৎ।

(২)
আমার একবিংশ জন্ম
ছুঁয়ে থাকবে ভেনাসের বুক,
স্খলিত সময়ের পাশে
শায়িত তৃপ্তির গন্ধে।

(৩)
ভোর হয়ে এল ,
বাসি শামিয়ানা গুটিয়ে নিয়ে,
এবার নায়কের পার্শ্বচরিত্র হয়ে ওঠার পালা।
[প্রকাশিতঃ ধ্রুবতারা পত্রিকা]


চারকথা

সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী

(১)
এখনো আকাশের মত খোলা হয়েউঠতে পারিনি
;
ছোট হয়ে আসা দিনে,তোকে বৃষ্টিরঙা শাড়ীতে
কালশিটে মেঘের গায়ে লেপ্টে থাকলে দেখলে,
মাইরি বলছি…বড্ড হিংসে করি।।
(২)
আমরা বাঁচি মেনে নিতে নিতে
,
তাল ঠুকে যাওয়া অভ্যাস দাসদাসী
হঠাৎ কল্পনাবিলাসী হলে বেয়াড়া বদখেয়ালে,
একমুঠো শীতে মুড়ে দেব অন্য বাগানের উষ্ণতা।
(৩)
নীলের ভিতরে আরেকটা নীল রঙের ছুরি
,
ভেজা অপরাধ আনমনে ধার বাড়িয়েছে কিছু,
সব ধোঁয়ার পিছনেই এক একটা আগুন থাকে,
নীল রঙের আগুন আরও উষ্ণ হয় জানো তো?

(৪)
মধ্যবিত্ত মনে অস্থির অনুনাদ

প্রিয় পল খুঁজে ইতিহাস যাপন,
আকর্ণ বিস্তৃতি মাঝে ছদ্ম হাসিতে
দোলাচলে পিছুটান স্বীকৃতি পাবে।
*****************************
[প্রকাশিত ঃ কালকথা পত্রিকা]

শেষ বিকেলের ট্রেন

সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী‌

বিকেলের দিকে একটা আসমানি ট্রেন চলে গেছে,

বেগুনী লাল রং গায়ে মেখে

পশ্চিম দিকে ঘন মেঘের কাছে

ছুটে গেছে;

সিল্যুয়েট হয়ে যাওয়া তাল সুপারি

আর নারকেলের সারির ফাঁক গলে

পিছলে পালিয়ে গেছে;

তাকে ধরে রাখে কার সাধ্য!

জানি এই পৃথিবী আবার ঘুরে এই ভাদ্রেই আসবে,

এই উন্মাদ উষ্ণতা ছুঁয়ে,

তবু যে ট্রেন চলে যায় তাকে আর,

একেবারে ঠিক ঠিক সেই ট্রেনটি কেই আর

ফিরে আসতে দেখা যায়না।

(প্রকাশিত ঃ কবিতা ক্লাব)

দ্বীপান্তর
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী

বিটোফেন পাহাড়ের গায়ে সূর্য্যাস্তের রং

সুর মূর্চ্ছনা ছড়িয়েছে সীমান্তে

এক সাগর ভালোবাসায় ডুবে মরবো বলে

নৌকায় পাল তুলিনি মোটে

এক জন আকাশের ভেক ধরে আসা যুবক

আমাকে ডেকে বললো…

যার কথা ছিলো দেবার মতো

সে ফিরে গেছে —

যার নেবার কথা ছিলো সেও আসেনি

অতএব আমি এই অন্তিম যুগের নাবিকটি হয়ে

ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন দেখি সুমাত্রা দ্বীপে।

[প্রকাশিত ঃ কথক পত্রিকা]

আজ আবার সেই পথে
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী

আজ আর মাঠ নয়
ফুটপাথ ধরে হোক হেঁটে যাওয়া
ল্যাম্পপোস্ট জড়িয়ে দুহাত
ঘুরে এসো নতুন ঘাসের বুকে
বাদামী রঙের বিকেলগুলো সব
সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দূরে
এক ছুটে চিলেকোঠাবন্দী ঘুড়ির ঘরে অথবা
এক চিলতে উঠোনে আকাশ নেমে আসলে
ওর বুকে মেঘ এঁকে দিও কিছু
যেমন রাঙাপিসি বুনে দিতো লাল নীল ফুল
শীত আসলেই মনে পড়ে উলের সোয়েটারে
ওর চেয়ে উষ্ণ করে ধরতে পারো তো হাত
ওর চেয়ে কম রেখো হৃদয়ের তফাত
আজ আর আক্ষেপ নয়
আদরের মত এসো আমার ভিতরে
অফুরান সময়ের খোঁজে হাত পাতি
আজ আর মাঠ নয়
ফুটপাথ ধরে হোক আমাদের হেঁটে যাওয়া।

[প্রকাশিতঃঅযান্ত্রিক পত্রিকা]

শরৎ আমার
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী

পথ আমায় যতবার বেশি টেনে ধরে
চলার খুশিতে ততবারই গন্তব্য ভুলে যাই;
আমার আহাম্মুকির সাক্ষী এই দু’চাকা,
সামনের চাকায় লেগে থাকে সময়,
পিছনে গড়িয়ে আসে কর্তব্য;
তাদের কাছে দায়ভার রাখিনা আর,
মেপে রাখিনা কোন পাপ-গ্লানিবোধ।
কাশের সুতো বুনতে বুনতে এগোয় শরৎ চাদর
বেখেয়ালি নীল কখন আসমানি দুঃখের পর্দা ছিঁড়ে ফেলে,
কখন বা তাতে লাগে উদাস মেঘের ঢেউ ,
তুলো টানে বুলিয়ে দেয় আজন্মখুশিদাগ জানিনা সেসব,
শুধু জানি এ দৃশ্য সাজানো হয়েছে শুধু আমার জন্য –
আমার জন্যই শিউলি ঝরে পড়েছে ভোরবেলা জুড়ে।
এখানে যদি রবীন্দ্রনাথ, কিটস, শেলী বা জীবনানন্দ থাকতেন
তাদেরও আমি একই কথা বলতাম, একই বিশ্বাসে।
এই সোনালী ধানের মাঠ ছায়াধরা পুকুর
আর জড়ো করে রাখা ভেজা পাট,…

কোত্থাও কেউ নেই এ শীতল বাতাসের  বয়ে যাওয়া আলসেমি বেলা
এ শরতে বাঁধভাঙ্গা আনন্দ অকারণ,  স্বর্গের লকগেট খোলা।

[প্রকাশিতঃ মায়াজম ,২০১৫ বইমেলা সংখ্যা]

সেফটি ফার্স্ট

সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী

পূবের পাড়ার পলটু পালিত পাঁয়তারা তার ভারী,

ফুরফুরে চুল উড়িয়ে হাওয়ায় চালায় মোটর গাড়ি,

চারচাকা নয় দুই চাকাতেই বিশ্বজয়ের আমেজ,

লাগামছাড়া ঘোড়ার মত প্রবল যে তার তেজ!

রোদ চশমা কপাল সেঁটে হেডফোনে কান এঁটে,

সকাল বিকেল বাইকটি তার গার্লস কলেজের গেটে।

গেটের পাশে খাকি পোশাক বৃদ্ধ দারোয়ান,

এক গালে তার সবসময়েই জর্দা দেওয়া পান,

‘এই যে হিরো, রোজই দেখি ইধার উধার করো,

বাঁচতে চাইলে মাথায় কেন হেলমেট না পরো?’

হেলমেট? সে কেমন জিনিস? খায় না মাথায় পরে?

পলটু এমন প্রশ্ন শুনে বেদম হেসেই মরে।

‘ফালতু ওসব ঝুটঝামেলা কোন পাগলে পোহায়?

তোমার মত বুড্‌ঢা হলে পরব না হয়, দোহাই –

এখন মাইরি জ্ঞান দিও না এক খিলি পান দিও,

ঘণ্টা খানেক আসছি ঘুরে’ – বললে রোমিও।

দশ মিনিট ও কাটল না আর, পলটু বেচারার,

মোড়ের মাথায় দুর্ঘটনায় হাড়গোড় ফ্র্যাকচার!

নাক ভাঙল, ফাটল মাথা, হাসপাতালে শুয়ে

বরাত জোরে বাঁচল প্রাণে এক খানি চোখ খুইয়ে।

সুস্থ হয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে এক চোখে তার ঠুলি,

বললে কেঁদে -‘হায় করেছি কি যে চরম ভুল ই!

হেলমেট আজ পরলে মাথায় চোখ হারাত না,

হেড ফোন না গুঁজলে কানে ঘটতো কিছুই না!

তাই বলি আজ বন্ধুসকল হেলমেট হোক মাস্ট,

আমার থেকে শিক্ষা নিও সেফটি জেনো ফার্স্ট!’

[প্রকাশিতঃ U TURN MAGAZINE, ২০১৬,ট্রাফিক সচেতনতা বৃদ্ধি ভাবনা সংখ্যা]

বই-চই
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী

***************
আমার সাজানো বইয়ের তাকে দুটো বই খুঁজে পাচ্ছি না কিছুদিন ধরে,
রোজ ভাবি,ভাল করে খুঁজে দেখব,যাকে বলে তন্ন তন্ন করে,
বিছানা, খাটের তলা,টেবিল, দেরাজ, রান্নাঘর এমনকি বাথরুম ও বাদ দেব না,
হলদে –সবুজ মলাট খুব প্রিয় দুটো বই, নিশ্চয়ই তাই!
শুধু নাম দুটো একদম খেয়াল পড়ছে না,
না পড়ুক, আমার বইয়ের সংগ্রহ তাক লাগিয়ে দেবার মত, জানেন?
যে দেখে সেই বলে আহা! এমনটি আর দেখিনি,
কি নেই? রবি ঠাকুর,শরৎ বাবু,বঙ্কিম,মুজতবা আলী থেকে হালের সুনীল,
শীর্ষেন্দু মায় শেক্সপিয়ার, ড্যান ব্রাউন, চেতন ভগত ও।
দেওয়ালের রঙে রং মিলিয়ে আলমারিটি, মলাট আর কলেবর ও একদম
শিল্পসঙ্গত ম্যাচিং করে, তাকের দিক টাও ফেং শুই মতে পারফেক্ট।
সেখান থেকেই কিনা দুটো ‘কি জানি কি’ বই উধাও? ইয়ার্কি?
হ্যাঁ, খোঁজার কথা বলছিলাম, না? —
বুঝলেন তো মশাই, সকালে উঠেই নাওয়াখাওয়া সেরে ছুটতে হয় অফিস,
ট্র্যাফিক জ্যামে গাড়ি তো রোজই লেট হয়, তখন ইম্পসিবল ,
ঐ সব খোঁজাখুঁজির হ্যাপা। ঠাণ্ডাঘরে সারাদিন কাটিয়ে বিকেলে বন্ধুদের সাথে
একটু আড্ডা, ক্লাব, হাসাহাসি না করলে কি আর চলে?
আর রাতে? কি আবার, টি.ভি তে রিয়্যালিটি শো বা আরও মুখরোচক
রিয়াল ব্রেকিং নিউজ,ডিনার টেবিল ফেরত লাইট মিউজিক আর
কম্পিউটারে অন্তর্জালের রঙিন নেশা ঘুম পাড়িয়ে দেয়…
তখনি মনে হয়… ঐ যাঃ! আজও তো হল না, থাক,কাল দেখা যাবে।
আলমারিতে পরিপাটি সাজানো বইগুলো গুনতে গুনতে ওদের রামধনু রঙিন
মলাটের স্বপ্ন দেখি… ছোটবেলায় যেমন দেখতাম, বাবা বই পড়ে
শোনাতেন… আর আমি স্বপ্নের দেশে বেড়াতে যেতাম… সত্যি।
হঠাৎ স্বপ্নে দুটো বই আসে হলদে-সবুজ মলাটে … বলে,
শোন আমরা একটু বেড়াতে গেছি কদিনের ছুটিতে,
আমাদের দুমলাটের ফাঁকে বড্ড ধুলো জমেছিল তোমার বন্ধ আলমারিতে,
দম আটকে আসত,তোমার তো সময় হয় না এখন ঝেড়ে দেবার,
ঐ যে আটশো টাকা মাস মাইনের লোক বিপিন?
তোমার ঘর সাফসুতরো করে রোজ… আলমারির তাক গোছানোর সময়
ইচ্ছে করেই ওর কোলে ঝরে পরেছি সেদিন টুপ করে দুটিতে,
ও ক্লাস এইট অবধি পড়েছিল জানো?
কিন্ত বই পড়ার নেশাটা ছাড়তে পারেনি আজও,
ছোটবেলায় দোকানে কাজ করতে করতে বইয়ের পাতায় তৈরি ঠোঙা
ছিঁড়ে নিয়ে পড়ত বলে বিস্তর কানমলা জুটত ওর মালিকের কাছে।
সেই ও এখন প্রতিরাতে আমাদের বুকের ভিতর সযত্নে লুকনো
নদী পাহাড়ের দেশ, ঝর্ণা জঙ্গল আর রকমারি মানুষের দেশ ঘুরে বেড়ায়,
আমাদের হাত ধরেই কানা লন্ঠনের মায়াবী হলদে আলোয়,……..
তবে ভয় নেই, আমরা জানি, ঘোরাঘুরি শেষে ফিরব আবার তোমার ঘরে,
ফিরিয়ে আনবে বিপিন। তুমি আমাদের ভুলতেই পার,আমরা ভুলব না।
তোমার এখন নতুন বন্ধু কত… কিন্তু মনে আছে ছোটবেলায় তুমি বলতে,
‘বইয়ের মত বড় বন্ধু আর হয় না’।
জন্মদিনে একটা বই ছিল তোমার সবচেয়ে প্রিয় উপহার।
স্কুলে ‘বন্ধু’ রচনায় বই নিয়ে লিখে দশে দশ পেয়েছিলে।
আর বন্ধু কি কখনো ছেড়ে যায়, বল?…
ঘুমটা ভেঙ্গে গেল, কপালের ঘাম মুছি সকালের রোদে,
ঘর গোছাতে এসেছে বিপিন, আমায় দেখে চমকে ওঠে একটু,
কাঁপা কাঁপা হাতে দুটো বই, হলদে সবুজ মলাট… রেখে দেয় তাকে তুলে,
“তাক গোছাতে গিয়ে পড়ে গেছিল বাবু, রেখে দিলাম”…।
বিপিন কে বলি, “রেখে দে রে তোর কাছেই বরং,
তুই তো ভালবাসিস বই পড়তে, থাক তোর কাছে”।
অবাক চোখে তাকায় আমার দিকে,কিন্তু খুশির ঝিলিক দেখতে পাই স্পষ্ট।
আর মনে মনে একটু হিংসে হয়, আমার পুরনো বন্ধু আজ ওর বেশি আপন,
তা হোক…ভোরবেলার স্বপ্ন কি সবসময় এমন হলুদ সবুজ হয় ?

[প্রকাশিতঃ কবিতা ক্লাব, ( ফ্রেন্ডস 91.9 এফ এম এ R.J রাজার কণ্ঠে আবৃত্ত)]

প্রজাপতির খোকা
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী

গোলাপফুলের পাতায় বসে একটা শুঁয়োপোকা
ডাকলে ‘পোকা’ রাগ করে সে – প্রজাপতির খোকা!
“নাই বা আছে রঙ বাহারি দুই খানি মোর ডানা
নাই বা পারি ধরতে উড়ে মস্ত আকাশ খানা,
খাচ্ছি পাতা এই বাগানে ফুর্তি করে বেশ,
কদিন পরেই দেখবে আমার অবাক করা বেশ।
তখন তো আর ওমনি করে সিঁটকোবে না নাক?
বলবে –‘ আমার ফুল বাগিচায় সারাটি দিন থাক!’
চাইবে এসব সত্যি জানি, একটু সবুর করো,
চোখ ধাঁধিয়ে মন রাঙ্গাতে হপ্তা কয়েক আরো!”

[প্রকাশিতঃম্যাজিক ল্যাম্প ওয়েব ম্যাগ]

সত্যি কালবোশেখি
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী

কি বিচ্ছিরি ফ্যাকাশে দিন

গুনে যাই রোজ এক দুই তিন
না রোদ না মেঘ সহজ কঠিন
আয়নাতে মুখ ঢাকি,
আসবে দেখো ঠিক একদিন সত্যি কালবোশেখি!

বেয়াড়া রকম শান্ত জীবন
চুলেও কিলিপ, রঙিন রিবন
আঁটসাঁট মনটায় বনবন
ঘুরছে চাতক পাখি,
বলছে যেন আসবে  দেখো সত্যি কালবোশেখি!

সবাই কুলুপ আটকে মুখে,
রয়েছে যেন কতই সুখে
বলছে না কেউ বুকটা ঠুকে
চলবে না আর ফাঁকি!
আসবে জানি ঠিক একদিন সত্যি কালবোশেখি!

ভাগ্যাকাশের মেঘ পাইলট
একটা কিছু ওলট পালট
করনা দেখি গোপন ব্যালট
সাজিয়ে নাহয় রাখি,
চলছে না আর না এলে ভাই সত্যি কালবোশেখি!

মেঘ আসে আর মেঘ চলে যায়
কেউ থামে না এইখানে হায়
অপেক্ষাতে রয়েছি যে ঠায়
আর কত দিন বাকী?
দোহাই তোমার জলদি এসো সত্যি কালবোশেখি!

[প্রকাশিতঃকবিতা ক্লাব]

ভূত সংবাদ

সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
saptarshi-chara-web

রাতদুপুরে বনবাদাড়ে
হানাবাড়ি শ্মশান ধারে,
ঐ যে কারা আবছা মতন
জ্বলছে দুচোখ ধোঁয়ার গঠন,
খিলখিলিয়ে উঠলে হেসে
চমকে পিলে যাবেই ফেঁসে,
শাঁকচুন্নি মামদো পেঁচো
ব্রহ্মপিশাচ কিংবা মেছো
হরেক কিসিম ভূতপেরেতে
হচ্ছে জড়ো রাত বিরেতে,
বলছে কিসব আওয়াজ খোনা
স্পষ্ট তবু যাচ্ছে শোনা –
“কি বলব ভাই বিষম বিপদ
মানুষ গুলো বেজায় যে বদ!
সমস্ত রাত জ্বালিয়ে আলো
হাড় মাস সব জ্বালিয়ে খেল,
আই. টি অফিস রাতেও খোলা
ঘুম টুম সব শিকেয় তোলা,
অমাবস্যা, চাঁদ না উঠুক
ভয় ডর আর নেই এত টুক,
বাইক চড়ে দাপিয়ে বেড়ায়
আড্ডা মারে ভূতের ডেরায়,
দেখলে মোদের টিটকিরি দেয়
লজ্জায় হই আপনি বিদেয়,
চললে এমন, আমরা কাবার
ভূত জনপদ হবেই সাবাড়!”
ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ কান্না জুড়ে
ভূত গুলো সব পালায় দূরে,
সদ্যই কাল মধ্যরাতে
‘দৈনিক ভূত’ পত্রিকাতে,
এসব খবর শুনতে পেলাম,
চুপি চুপি জানিয়ে গেলাম।

_______

ছবিঃ লেখক
[প্রকাশিত ঃ ম্যাজিক ল্যাম্প জুলাই ২০১৬]

Author: saptastar

By profession a Physics Teacher at High School, but passionately a writer and painter and occasionally actor,elocutionist and singer.

6 thoughts on “আকাশী কবিতার খাতা”

  1. কিছু আগে পড়া গল্প, কবিতার সাথে কিছু নতুন লেখা পড়লাম । “শরৎ আমার ” কবিতাটি পড়ে মুগ্ধ হলাম । ভালো লাগছে পড়তে ।

    Like

  2. নতুন বছরের শুরুতে নতুন বিভাগ”কথাবার্তা”
    পড়লাম । প্রিয় লেখিকার যে কোন লেখা পেলেই গোগ্রাসে পড়ে ফেলেছি এতদিন, কিন্তু তাঁর সম্পর্কে অনেক অজানা কথা জানতে পেরে ভাল লাগল ।
    কিছু গল্প আগে পড়া ছিল, কিশোর ভারতী পাওয়া মাত্রই “উল্টো সময় ” পড়েছিলাম কিন্তু গল্পটা এত ভাল লেগেছিল যে লোভ সামলাতে পারলাম না আবার পড়লাম ।
    “রাতের পর ” গল্পের শুরুতেই চমক ছিল যত এগিয়েছে তত অবাক হয়েছি খুবই বলিষ্ঠ লেখা । কবিতা “প্রজাপতির খোকা” ভীষণ মিষ্টি লেগেছে ।

    Like

    1. পড়ার এবং মতামত দেবার জন্য অজস্র ধন্যবাদ। পাশে চাইব এভাবেই সব সময়।

      Like

Leave a comment