ছবিতে-গল্পে

ম্যাজিক ল্যাম্প ওয়েব ম্যাগাজিনে প্রকাশিত কবিতা-কমিক্স পল্টু পুরাণ। রেখা ও লেখাঃ নিজস্ব।

page 1

page 2

page 3

page 4 [end]

শারদীয়া কিশোর ভারতী ২০১৬ তে প্রকাশিত কমিক্স স্বর্গে এবার T20. লেখা ও পরিকল্পনাঃ নিজস্ব, অঙ্কনঃ অর্ক‌জ্যোতি নন্দী।

page 2

page 1

গল্প স্বল্প

নরম গরম
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী

দুটো চোদ্দর আপ রাণাঘাট লোকাল।শনিবারের দুপুরবেলা,মে মাস।বেজায় গরম,আর তেমনি ভিড়। অফিসফেরতা একঝাঁক প্রাণীকুল।ব্যারাকপুরে ভিড়টা একটু মনে হয় হালকা হয়েছিল।ওমনি পঞ্চম কামরার একটা কোণ থেকে আওয়াজ ভেসে এল...
---“ও মশাই পা’টা একটু সরিয়ে দাঁড়ান না! এত গায়ে হেলে পড়ছেন কেন?”...
সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা ...
---“ কি? আমি হেলে পড়ছি? আপনি হেলছেন! হেলে সাপ কোথাকার! কোত্থাও সরবনা। ইয়ারকি? এতক্ষণে সবে একটু পা’ রাখার জায়গা পেয়েছি ওমনি!...”
---“এতক্ষণ! আপনি ছিলেন কোথায়? আমি তো দেখিনি এতক্ষণ আপনাকে!”
---“কি করে দেখবে? আমি তোমার বাবার মাথার উপরে নাচছিলাম তো”!...
---“ কি! এতবড় আস্পর্ধা! তুই বাবার নাম তুললি”?...
----“বেশ করেছি! আবার তুলব”। ...
---- “বটে! বেশ করব? তুই কাঁচরাপাড়ায় নাম।তারপর মজা দেখাচ্ছি”।...
----“হ্যাঁ হ্যাঁ, দেখব। তোর কলার ধরে এখুনি চলন্ত ট্রেন থেকে ছুঁড়ে ফেলতে পারি জানিস”?
ক্রমশঃ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে।দুজনে আস্তিন গোটায়।হঠাৎ আইসক্রিমওয়ালা বিট্টু দুহাতে দুটো আইসক্রিমের স্টিক নিয়ে ওদের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে উঠল..
---“ও দাদা অনেক তো হল। এবার একটু ঠাণ্ডা হ’ন। নিন...”।
কথা শেষ করার আগেই দুটো পরাক্রমশালী হাতের অতর্কিত ধাক্কায় কামরার মেঝেয় হুমড়ি খেয়ে পড়ে সে।আইসক্রিম দুটো ধরে রেখেছে তবু।পড়তে দেয় নি।এক মুহূর্ত দুই যুযুধান থমকে দাঁড়ায় পরস্পরের দিকে উদ্যত হাত উঁচিয়েই,ততক্ষণে কামরার বাকি যাত্রীরা রীতিমত কোণঠাসা করে ফেলেছে ঐ দুজনকে ।
---“ছি ছি!কি করলেন আপনারা! বেচারা ছেলেটা আপনাদেরই থামাতে গেছিল আর আপনারা কিনা!...এই ভিড় ট্রেনে এসব ঝগড়াঝাঁটি চলবেনা! নামুন নামুন!”
অথচ এরাই কিছু সময় আগে বেশ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছিল বাদানুবাদ। আর সম্ভাব্য হাতাহাতি দেখার উত্তেজনায় ফুটছিল ভিতরে টগবগ।যাই হোক, এই অবিরাম সম্মিলিত ভর্ৎসনা সামলে হিমশিম দুই বাবু যখন ভাবছেন সত্যি নামবেন কিনা, তখনি ধুলো টুলো ঝেড়ে ফেলে উঠে দাঁড়ায় বিট্টু। আগের চেয়েও বেশি হাসিমুখে বলে,
---“উফ! ভাগ্যিস পড়েনি এই দুটো! নিন এবার খান দাদা।সত্যি যা গরম এতে কি আর মেজাজ ঠিক থাকে কারো”!
এবার সবকটা মুখ ঘুরে যায় বিস্ফারিত নেত্রে বিট্টুর দিকে। এমনটাও হয়? এত নির্লিপ্ত, এত সহনশীল হতে পারে কেউ আজকের এই অসহিষ্ণু সময়েও? আমরা সবাই কত তুচ্ছ ব্যাপারে রোজ রাগারাগি করি।এভাবে চলতে পারলে তো কত শান্ত হয়ে যেত চারপাশের পৃথিবীটা।আইসক্রিম খেতে খেতে দুজনে দেখল কোন ফাঁকে যেন বিট্টু নেমে গেছে কামরা থেকে, নিঃশব্দে।
(প্রকাশিত - অল্প কোথায় গল্প [পত্রভারতী] ২০১৪)

Share this: