২১০০
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
______________
ভূগর্ভস্থ রেশন শপ। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। নিস্তেজ হয়ে আসা শীর্ণ হাত কাউন্টারে পৌঁছানোর আগেই নোটিশ ঝুলল। ‘সরকারী বরাদ্দ অক্সিজেন নিঃশেষিত, দুঃখিত’। মৃত্যু!
সময় কম,তাই…
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
______________
এক ওভারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতল ভারত। এক মিনিটের ছবির অস্কার জাপানের। গোটা একদিন দাম্পত্যজীবন কাটানোয় অভিনন্দন বাঙালী যুগলকে। একপাতায় উপন্যাস।
স্যালুট
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
______________
বড় রাস্তায় জটলা বাড়ছে ছোট্ট দেহটা ঘিরে,
কচি প্রাণ তার স্পন্দন কিছু এখনো রয়েছে বাকী,
“আহা – উহু – ইশ” শোনা যায় শুধু চাপা সমবেত সুরে
ভিড় ঠেলে এক খোঁড়া দারোয়ান গায়ে শার্ট প্যান্ট খাকী,
চকিতে নিমেষে পাঁজাকোলা করে তুলে নেন ট্যাক্সিতে,
জনতা নিথর বলাবলি করে “ছিলেন উনি আর্মিতে”।
“ও সে যতই…”
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
______________
চাকরী পাবার খবর পেতেই আবার ফোন; কালো বলে যারা বাতিল করেছিল।
মেয়ে সটান বলল – “মা আমি এ বিয়ে করব না!”
জৈবনিক
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
______________
ফ্রয়েড বলেছিলেন –
সমস্ত কার্যকারণের মূলে আছে জৈবিক ইচ্ছেদল।
বাস্তবিক সমস্ত আত্মাই ক্ষুধিত,
রোমান্টিকতা নেহাৎই কল্পনাবিলাস।
চাতকেরাও নাকি মেঘলা আকাশে শুধু
পোকার সন্ধানেই ওড়ে!
যায় যায় দিন
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
______________
ক্যালেন্ডারের পেটে ভরা
শুধু একগাদা তারিখ,
আগের পরের সংখ্যাগুলো কেবলই
মুখ চাওয়াচাওয়ি করে,
তেমন জোরে একবার হাওয়া দিলেই
সব ভাল মন্দ দিন উল্টে পাল্টে যায়।
ঝাউগাছ
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
______________
একদিন কাউকে কিচ্ছুটি না বলে জলে নেমে যেও ঝাউগাছ।
আর কতদিন দাঁড়িয়ে দেখবে বল সৈকতের সমুদ্রছেনালি!
দিনের পর দিন রাতের পর রাত তোমার কাছ থেকে অনায়াসে সরে,
তোমারি চোখের সামনে ওরা ঢেউ খেলে গেছে বেহায়ার মত।
কোন নির্মম সুনামিতে ভাঙ্গেনা হায় এই বিস্তৃত বালুতট।
জলে নেমে যেও তুমি চুপিচুপি একদিন কাউকে কিছু না বলে।
চিচিং ফাঁক!
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
______________
কিনে নয়া মোবাইল একখান
বিশু হাঁটে হেডফোনে পেতে কান
হঠাৎ কাঁদছে দেখি ভেউ ভেউ
সাত দিনও হয়নি তো অ্যায়সা কিঁউ?
মাথা চাপড়িয়ে বলে গামবাট –
“ভুল করে মেরেছিনু ফরম্যাট!”
অসম
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
***************
-তোমার আগে আমি মরব।কারণ,পরজন্মে তোমার আগে না জন্মালে বিয়েটা সেবারেও হবেনা।
-মেরে ফেলব ওকথা বললে ফের!
-হাহা!মারো!
কর্তৃপক্ষ দায়ী নহে
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
******–******
শহরজুড়ে ম্যাট্রিমনি সাইটের বিজ্ঞাপনী হোর্ডিঙে সুখী দম্পতির হাসিমুখ। সকালের খবরের কাগজে মহিলা মডেলটির নিথর দেহের ছবি।পরকীয়া সম্পর্কের জেরে আত্মঘাতী।
শহীদ
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
______________
“কাঁদবেন না, আপনি তো এক গর্বিত পিতা!”
বীরচক্র পদক নেবার সময় আচমকা বৃদ্ধের প্রশ্ন – “মন্ত্রীদের সন্তানেরা কখনো শহীদ হয়না কেন?”
পুত্রার্থে
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
______________
-“কী ব্যপার বল তো মা? বেয়ানদের হালচাল যে পাল্টে গেছে দেখছি!”
-“আসলে গতকাল ক্লিনিকের USG রিপোর্টে বলেছে, ছেলে আসছে এবার”!
দ্বৈত
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
______________
লেবারঃ ছ্যার বৌটার শরীল খারাপ, ছুটি দিন পিলিজ!
ওভারসীয়ারঃ চোপ !
*****************************
ওভারসীয়ারঃ স্যার কাল একটু ছুটি পাব? মেয়েটার জ্বর।
মালিকঃ না!
ধোঁয়া
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
***************
শিশুশ্রমবিরোধী সম্মেলন সেরে রায়বাবু রাস্তার চা-দোকানে-
“এই ছোঁড়া, জলদি এককাপ লিকার”।
হাফপ্যান্ট আর তালিমারা গেঞ্জি এগিয়ে দেয় ধূমায়িত পেয়ালা নি:শব্দে।
কপিবুক
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
****************
স্বর্গে ফেসবুক পরিষেবা চালু হওয়ায় কবিগুরু অ্যাকাউন্ট খুলে “বীরপুরুষ ২” লিখে পোস্টালেন।
পাঠকের কমেন্ট – কার থেকে ঝাপলে বস?
কবিগুরু মূর্চ্ছিত!
রক্তবীজের বংশধর
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
***************-
ব্রহ্মা – হে দেবী চামুণ্ডে শতসহস্র অসুর নাশিয়াও আপনি বিমর্ষ কেন?
দেবী- স্পষ্ট দেখিতেছি কলিযুগে ফের ইহারা সন্ত্রাসবাদীরূপে পুনর্জন্ম লাভ করিবে।
তৃতীয় নয়ন
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
********—********
শাঁখ বেজে ওঠে। তুলির নিপুন টানে চোখ মেলেন দেবী। সাদা মণিদুটোর উপরে আবার কালো চশমা পরে নেন বৃদ্ধ সুবল পাল।
দিন বদলায়
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
______________
রাজু,টিফিন আনিসনি তো কি? আয়, আমারটাই ভাগ করে খাই।
**************************
হ্যালো! আমি রাজু! খুব মুস্কিলে…
সরি বিজি রে একটু। (ক্লিক!)
*******************************
ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
আলো ফুটছে। মায়ের বোধন। শহরমুখী জনতা। গ্রামে ফিরছে ব্যর্থ ঢাকি। বায়না হয়নি। মাইকে ভেসে আসে সিডিতে ঢাকের বোল। আলো নিভছে।
স্মাইল প্লিজ
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
******—-******
দুগ্গা ঠাকুর চক্ষু মোদেন ফ্ল্যাশের ঝলকানিতে,
প্যাণ্ডেলেতে খচ্ খচাখচ্ সেল্ফিতে সব মেতে;
দেবী ভাবেন হায় রে পোড়া কপাল হল কি রে!
আগে সবাই করত নমো এখন পিছন ফিরে,
ফোকাস এখন ললনাদের শ্যাম্পু ওড়া চুলে,
ব্যাকড্রপেতে মঞ্চ সাজান দেবীর ছেলেপুলে।
ক্ষুধা
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
*********—-********
তেল নেই চিনি নেই গম নেই,
দুদিন পর যারা চীৎকার করবে এক মুঠো ভাতের জন্য,
তাদের হাতে তুলে দাও রঙিন মুঠোফোন-
সমস্ত স্বপ্নসুখ মিলেমিশে ধরাছোঁয়া যায় তবে,
অলীক রাজ্যে আর কোন ক্ষুধা নেই যেন;
ওরা গোগ্রাসে গিলছে দেখো যাবতীয় কল্পবাস্তবতা।
মাতৃরূপেন
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
“সাতজন্মে এমন শুনিনি স্যার! নিজেই থানাতে সারেন্ডার করেছে। আবার বলছে – মেয়েটাকে রেপ করার সময় নাকি নিজের মায়ের মুখ দেখতে পেয়েছিল!”
নেশা যখন
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
*****************
ছমাস পর রিহ্যাব থেকে বেরিয়ে অর্ক জড়ানো গলায় বলল-
“মা জানো ,সেই প্রথমদিনে ওরা বলেছিল একবার ইনহেল করলে কিচ্ছু হবেনা”।
সত্যাসত্য
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
*****************
কবি অনন্তবাবুর বাড়িতে মিত্রাকে ঢুকতে দেখে মজা করেই বিপ্লব ফোন করল-“হ্যালো, কোথায় আছ?”
-“এইতো মায়ের সাথে শপিং-এ গো”।
নিস্তব্ধতা!
ভাগ্যফল
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
*****************
জ্যোতিষী বললেন-“সত্বর রত্নধারণ,অন্যথায় মৃত্যুযোগ!”
ক্ষোভে বলে বসলাম-“আর ততদিন আপনি না বাঁচলে?”
বেরিয়ে আসার পরমূহুর্তেই বজ্রপাতে ভস্মীভূত চেম্বার!
সেরা থিম
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
*****************
-“সেরা থিমের প্রাইজটা তোর জন্যই হাতছাড়া হবে দেখছি! এগুলো দুর্ভিক্ষপীড়িত লোক, খেতে দিলি কেন এত”?
-“দাদা, পূজোর ভোগ চাইল যে”!
যন্ত্রানুঘটক
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
*****************
– সরি, আমার ওভাবে বলাটা ঠিক হয়নি।
- রাগীমুখ emogi!
- একবার তাকাও এদিকে।প্লিজ!
- ভেংচিকাটা emoji!
দুজনেই মোবাইল বন্ধ করে। একবিছানায়। আদরশব্দ।
বিলুপ্ত
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
*****************
বিকেলের মাঠ বেচে একটা স্মার্টফোন কেনা হল;
সবকিছু খেলা যায় তাতে।
বইপত্র বেচে বড় আইপ্যাড এল, ব্রহ্মাণ্ড ছোট হল আরও।
একে একে বেচে দেওয়া হল পাড়ার রক, চা-দোকান ক্যাফেটেরিয়া হল।
পুরনো বাড়িগুলো ভাঙ্গা পড়ে গেছে,ওখানে নতুন মিনারে বন্দী এখন মেঘ।
এক বৃদ্ধ চড়াই ভুল শহরে ফিরে এসে পথ হারাল আকাশের গর্তে।
আলোর জন্য
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
**************
অপার ব্রহ্মাণ্ডের অসীম অনন্ত রহস্যময়তা জুড়ে থাকা সহস্রকোটি ছায়াপথ সমুদ্রের
এক নিরালা কোণের তুচ্ছাতিতুচ্ছ এক সাধারণ নক্ষত্রের তৃতীয় আবর্তনকক্ষের নীল গ্রহটিতে
বসবাসকারী প্রাণী হয়ে আমরা সভ্যতার শুরু থেকে খুঁজে চলেছি কোন এক তীব্র শক্তিমানকে,
যিনি উত্তর জানবেন সবকিছুর, আদিম আলোর মহাবিস্ফোরণ থেকে অন্তিম অন্ধকারের।
শুধু ক্রমাগত বয়ে চলা সময়নদীর স্রোতে হারিয়ে যেতে থাকে অন্তরের উষ্ণতর আলোকবিন্দু;
অন্তিম শীতলতার দিকে অব্যর্থ পদক্ষেপের কৃত্রিম চলনে আমরা ভুলে যাই সমস্ত সুন্দর সত্য।
কোজাগরী
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
***-**********
এই রাতে নেমে আসে চাঁদ,
রূপোলী থালা গলিত জ্যোৎস্না ধারা নিয়ে
হিমেল হাওয়ার কানে ডেকে বলে চুপিসারে,
কে আছ জেগে?
জেগে আছে ঘরে ঘরে প্রদীপের আলো,
আতশ বাজির সাথে জ্বলে ওঠে আকাশ পাতাল ও।
যদি বা পড়োও ধরা
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
***********
কবিতাদর্পণ শারদীয়াতে সম্পাদকের নামে কবিতাটা দেখেই একটা ঝাঁকুনি খেল সুবিমল। গত ফাল্গুনে তার ঠিক এই লেখাটা তিনিই বাতিল করে দিয়েছিলেন।
মেঘ বলেছে
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
*********
আমার ভিতর স্নান করে যাও মেট্রো নগর
অনেক ধুলোর অনিচ্ছেগাছ শরীর জুড়ে
স্থানুর মত দাঁড়িয়ে আছ প্রাকার ও ঘর
বদলে যাওয়া শতেক হৃদয় যাচ্ছে পুড়ে
আমি তোমায় বৃষ্টি দেব, ভিজবে না তাও?
রোদ চশমার আড়াল ছিঁড়ে বারেক তাকাও!
মুষলপর্ব ২
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
**********
মহাকাশযানের ভিতর ভিনগ্রহীরা-“পৃথিবীতে কখন হামলা করব কম্যান্ডার”?
- “দাঁড়াও, কিছুক্ষণ। মানুষেরা নিজেরাই আগে নিজেদের নিকেশ করুক, আমরা নির্বিঘ্নে দখল নেব।
যন্ত্রের যন্ত্রণা
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
**********
-“কবিতা হলনা! কেন”?
-“দেখুন না স্যার, অভিধান, ব্যাকরণ, ছন্দ-মাত্রাজ্ঞান সব প্রোগ্রামিং করে দিলাম। তবু ব্যাটা অকম্মা রোবট লিখতে পারলোনা”!